প্রবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা কর্মসূচির ১৩তম ক্যাম্পেইন উদ্বোধনকালে

আমার রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজগুলো যেন সম্পূর্ণ করা হয়—রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ , ২৯ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
ছবি - কালের বিবর্তন

মো: জুয়েল রানা, লেবানন ব্যুরো : লেবানন থেকে আমার বিদায় নেওয়ার সময় এসেছে। খুব শীঘ্রই আমি আমার দায়িত্বভার হস্তান্তর করে লেবানন থেকে বিদায় নিব। তবে এখানে আমার দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছরে যতটুকু সম্ভব সাধারন প্রবাসীদের কল্যানে কাজ করেছি। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। কারণ, মানুষের সেবা করার সুযোগটা সবাই পায় না। কিন্তু আমি সেই সুযোগটা আপনাদের স্বার্থে সদ্বব্যবহার করেছি। হাজার হাজার প্রবাসী আমার জন্য দোয়া করেছে। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করছি।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) বৈরুত দূতাবাসে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কর্মসূচির ১৩তম ক্যাম্পেইন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, টানা সাড়ে ৪ বছর দায়িত্ব পালনের পর বদলী হয়েছি। পরবর্তী মিশনের জন্য তাঁকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী মাসে তিনি লেবানন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিবেন।

তিনি ২০১৫ সালের ১২ আগষ্ট বৈরুত দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন। তিনি লেবাননে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রদূত । একই সঙ্গে তিনি সাইপ্রাসেরও রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন।

সাড়ে ৪ বছর দায়িত্ব পালনকালে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের কল্যাণে নানা যুগান্তকারী উদ্যােগ গ্রহণ করেন এই রাষ্ট্রদূ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কর্মসূচি, অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসা ও বৈধকরন প্রক্রিয়া, নিহত প্রবাসীদের মরদেহ দেশে দ্রুত প্রেরণ, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি ) প্রদান ইত্যাদি।

তিনি প্রথম রাষ্ট্রদূত যিনি বাংলাদেশি অধ্যুষিত সাবরা বাজার পরিদর্শন করে প্রবাসীদের খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। এছাড়া সাম্প্রতিক ডলার সংকটে প্রবাসীদের দূর্ভোগ নিরসনে লিবান পোস্ট, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ লেবাননের নানা সরকারী দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রবাসীদের মন জয় করে জনবান্ধব প্রবাসী রাষ্ট্রদূতের খেতাব প্রাপ্ত হয়েছেন।

বৈরুতের সাবরা বাজার পরিদর্শন করছেন, রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।

এসব কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ছিল লেবাননে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সুযোগ। রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রমে এই বিশেষ সুযোগ অর্জিত হয়।

দীর্ঘদিনের জরিমানা মওকুফ করে শুধু এক বছরের জরিমানা বাবদ মহিলাদের ২০০ শো মার্কিন ডলার এবং পুরুষদের ২৬৭ মার্কিন ডলার এবং বিমান ভাড়া বাবদ ৩০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ সাপেক্ষে এই সুযোগ নিতে পাচ্ছেন অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশে দূতাবাসের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় এরই মধ্যে নিবন্ধন করা ২৫০০ জনেোর মধ্যে প্রথম দফায় ৪৯০ জন অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন, বাকিরা প্রক্রিয়ায় আছেন।

এছাড়া রাষ্ট্রদূতের নেওয়া বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কর্মসূচিও অসহায় প্রবাসীদের জন্য বড় আর্শীবাদ হয়ে দাড়ায়। লেবাননে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিজয়ের চিকিৎসা ইউনিটের সহায়তায় এ পর্যন্ত ১৩টি ক্যাম্পে প্রায় ৫ হাজার লেবাননপ্রবাসী বাংলাদেশি এই কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।

তিনি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তার রেখে যাওয়া প্রবাসীদের অসম্পূর্ণ সকল কাজ গুলো যেন সম্পন্ন করা হয়। যেমন জেল জরিমানা ছাড়া দেশে যাওয়া, নিয়মিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা, পাসপোর্টের কপি দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন ও আকামা করার সুযোগ করে দেয়া যা প্রক্রিয়াধীন, সহ সকল কল্যান মূলক কাজের যেন ধারাবাহিকতা রাখা হয় তিনি সেই অনুরোধ করেন।

প্রবাসীদের উদ্দ্যেশ্য করে তিনি বলেন,’আপনারা যে উদ্যোশে লেবাননে এসেছেন, আপনাদের সেই উদ্দেশ্য আল্লাহতালা কবুল করুন।আমি আমার দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি আমার চলমান কাজগুলো যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়।

রাষ্ট্রদূতের এম আবেগঘন বক্তব্য শুনে দূতাবাসের চিকিৎসা নিতে আসা প্রবাসীরাও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেককে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। কান্না জড়িত কন্ঠে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আজ উনার বক্তব্য শুনে আমরা সত্যিই মর্মাহত ও ব্যাথিত।উনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন সেটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজের মনকে মানাতে পারছি না।শত প্রতিকূলতার মাঝেও উনি সাধারণ প্রবাসীদের জন্য যথেষ্ট কাজ করেছেন।

লেবাননের আনাচে কানাচে প্রবাসীদের সাথে আলোচনা অনুষ্ঠান করেছেন। অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। অবৈধদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেছেন। উনার অবদান লেবাননপ্রবাসীরা আজীবন মনে রাখবেন। উনার চলে যাওয়াতে আমরা অভিভাবক হারা হয়ে পড়ব। দোয়া করি সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে সুস্থ, সুন্দর রাখেন।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর