মেহেদী হাসান মুকুটঃ মুক্তিযুদ্ধকে গতিময় ও সুসংহত করার জন্য, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর ভাবমূর্তিকে তুলে ধরতে ‘প্রবাসী সরকার‘ গঠনের চিন্তাভাবনা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত হয় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার আদেশ।‘
ভারতের আগরতলায় এক বৈঠকে ২৮ জন এমপির উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনমুক্ত কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর চুয়াডাঙা অথবা মেহেরপুর শহর কে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ঐ বৈঠকে ১৪ এপ্রিল অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু এই গোপন সংবাদ বিদেশী সাংবাদিকরা জেনে ফেলায় দেখা দেয় বিপত্তি। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে এ সংবাদ প্রচারের পর পরই চুয়াডাঙা শহর পাক বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান থেকে চুয়াডাঙার উপর ব্যাপক ভাবে বোমা হামলা চালাতে থাকলে ১৫ এপ্রিল চুয়াডাঙা পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। সে কারণে বাধ্য হয়েই শপথ গ্রহনের তারিখ ১৪ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৭ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়। আর স্থান নির্বাচন করা হয় মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে।
এ দিন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন তাজ উদ্দিন আহমেদ। ঐতিহাসিক এই আম্রকাননে দেশ–বিদেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে অর্থদপ্তরের মন্ত্রী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান কে স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রী, খন্দকার মোস্তাকআহমদকে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রী এবং এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। চীপ অফ ষ্টাফ হিসেবে আবদুর রবের নাম ঘোষণা করা হয়।
এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে দিনাজপুর হতে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির চীপ হুইপ অধ্যাপক ইউছুফ আলী বিপ্লবী সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ সময় প্রায় শতাধিক দেশি বিদেশী সাংবাদিক ওআশে পাশের এলাকার প্রায় হাজার পাঁচেক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ কুষ্টিয়া জেলার মেহের পুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার ভবেরপাড়া গ্রামের নাম পরিবর্তন করেমুজিবনগর নাম করন করেন। গার্ড অব অনারের নেতৃত্বে ছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন এসডিপি ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মেহেরপুর মহকুমার তদানিন্তন এসডিও তৌফিক ই–এলাহী চৌধুরীকে। সার্বক্ষণিক সহযোগিতায় ছিলেন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক শফিকুললাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনার সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন টাংগাইল থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এ্যাডঃ আবদুল মান্নান।
এই স্বাধীনতার ঘোষণা কার্যকর হয় ২৬ মার্চ থেকেই। প্রবাসী সরকারের উপদেশ পরামর্শ প্রদানের জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘উপদেষ্টা পরিষদ‘ গঠিত হয়। এই উপদেষ্টা কমিটির প্রধান ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। লন্ডন, নিউইয়র্ক, স্টকহোম ও কলকাতায় কূটনৈতিক মিশন খোলা হয়। এ দূতাবাসগুলোতে বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বের বিশেষ দূত ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইদ চৌধুরী।
মুজিবনগর সরকারের পরিচালনায় নয় মাসের সশস্ত্র সেই সংগ্রামে আসে বিজয়, ঝড়ে যায় ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণ। বিজয়ের শেষহাসিঁ হেঁসে বাঙ্গালি পায় লাল সবুজের পতাকা। নব অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের।
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
চিকিৎসার জন্যে খালেদা জিয়াকে জার্মানি নেয়ার প্রস্তুতি
চিকিৎসার জন্যে খালেদা জিয়াকে জার্মানি নেয়ার...
আমেরিকার কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় আসতে চায় বিএনপি: খাদ্যমন্ত্রী
আমেরিকার কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় আসতে চায়...
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দোয়া ও মিলাদ মহফিল
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের দোয়া ও মিলাদ মহফিল
ফাঁকা রাজধানী, তিন দিনের ছুটিতে দেশ
ফাঁকা রাজধানী, তিন দিনের ছুটিতে দেশ
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের হাজারো ভিডিও আপলোড
প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের হাজারো ভিডিও আপলোড
শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ
শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ