পুলিশের সেই ওসি’র বিচার আমাদের চাইতে হবে

প্রকাশিত: ২:৫২ অপরাহ্ণ , ১৯ আগস্ট ২০২৪, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
ছবি- কালের বিবর্তন

মো.তাসলিম উদ্দিন,সরাইলঃ মো.আরিফুল ইসলাম সুমন তার সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের লেখাটি হুবহু দেওয়া হলো। সেই ওসি সরাইল থানায় কর্মরত থাকাকালে নিজেকে একসময়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচয় দিতেন বুক ফুলিয়ে। থানাকে দালাল মুক্ত করার নামে এখানকার কোনো সংবাদকর্মীওজনপ্রতিনিধি এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের থানায় প্রবেশে কড়াকড়ি অঘোষিত বাধানিষেধ দিয়েছিলেন সেই ওসি।

থানায় দায়িত্বরত কিছু কিছু অফিসারকে এখানকার কোনো সচেতন মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক না গড়ার নির্দেশও দেন সেই ওসি। প্রায় প্রতিদিন রোজা রাখলেও সেই ওসি ৫০হাজার টাকার নীচে ঘুষ গ্রহণ করতেন না। ঘুষ নেয়ার পর ভুক্তভোগী লোকদের শেখানো কথা ভিডিও করে রাখতেন, সেখানে জবানবন্দি নিতেন ওসি স্যার ভালো মানুষ, তিনি কোনো প্রকার টাকা পয়সা ছাড়াই আমার লোককে থানার হাজত থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।

পরে এই ভিডিও’র ভয় দেখিয়ে সেই ভুক্তভোগীকে জানিয়ে দেয়া হতো – এ ঘুষের টাকার ব্যাপারে মুখ খুললে পরবর্তীতে বড় ধরনের মামলায় আসামি করা হবে। ওসির এই অন্যায় কাজে সহযোগিতা করতেন তার পছন্দের একাধিক দারোগা, বর্তমানে তারা কেউই সরাইল থানায় নেই।সেই ওসি এখানকার অনেক সংবাদকর্মীকে নানাভাবে শাসিয়েছেন।

তার অপকর্ম নিয়ে রিপোর্ট করতে চাইলে সেই ওসি ‘আয়না ঘরের’ ভয় দেখাতেন। বলতেন কখন ডিজিএফআই এসে তুলে নিয়ে যাবে, টেরই পাবেন না। আর পরিবারের লোকজন তো আপনার খোঁজই পাবেনা। আরও কতকিছুর ভয় দেখাতেন সংবাদকর্মীদের।সেই ওসির সাথে সরাইলের একটি ভূমি অপরাধী সিন্ডিকেটের সখ্যতা ছিল। সেই সিন্ডিকেট বিতর্কিত দলিল সৃজন করে নিরীহ মানুষের বসতবাড়ি ও জমি কিনে নিতো নামমাত্র টাকায়।

পরে সেই ওসির সহযোগিতায় সিন্ডিকেট মোটা অর্থের বিনিময়ে ভুক্তভোগী নিরীহ মানুষকে থানায় একাধিকবার এনে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে সেই জমি দখলে নেয়ার ভূমিকা রাখতেন।এমন একটি ঘটনায় সরাইলের একজন তরুণ ব্যবসায়ীকে সেই ওসি থানায় এনে নির্যাতন চালায় এবং বলে তুই এখনও বাড়ি কেন ছেড়ে যাস না। সেইদিনের নির্যাতনে থানায় পুলিশ হেফাজতে সেই নিরীহ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। তখন ভূমি সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য থানায় ওসির রুমে উপস্থিত ছিলেন।

ওসির রুমে সেই ব্যবসায়ী মাটিতে লুটিয়ে পরে মারা গেলে পুলিশ নাটক সাজিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এবং সেই ব্যবসায়ী হার্টঅ্যাটাকে মারা গেছেন এমন কাগজপত্র সৃজন করেন।পরে এ ঘটনায় সেই ওসির বিচার চেয়ে নানা পেশার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এসময় যারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন তাদের মধ্যে নেতৃত্বে থাকা কয়েকজনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেন সেই প্রভাবশালী ওসি।

একসময় শোকে কাতর হয়ে সেই নিহত ব্যবসায়ীর বড় ভাই এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। পুলিশের একজন ওসি কিছু টাকার বিনিময়ে অন্যের জায়গা সিন্ডিকেটের দখলে এনে দেয়ার কার্যক্রম চালিয়ে সেই পরিবারকে দুটি লাশ উপহার দেন।শুধু তা-ই নয়, সেই ওসির নির্দেশে তুচ্ছ ঘটনা সামাল দিতে গিয়ে নিরপরাধ পথচারী এক কলেজছাত্রকে গু লি ছুঁড়ে
হ ত্যা করে পুলিশ।

এসময় সেই ওসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গু লি করার নির্দেশ দেন। পরে নিহতের পরিবার ওসির বিরুদ্ধে মামলা দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে হয়রানি করে থানাপুলিশ। সেই নিহত কলেজছাত্র তার মামার কাছে থাকতেন। আদরের ভাগিনার হ ত্যার বিচার না পেয়ে মামা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের দুঃশাসন পতন হবার পর বর্তমান সরকার বলছে সকল অপরাধের বিচার হবে। এ আশায় আমরা সরাইলবাসী সরকারের কাছে আবেদন করছি, পুলিশের সেই ওসির দৃষ্টান্ত বিচার আমরা চাই। সেই ওসি আওয়ামী লীগের ঘরানার লোক হিসেবে সরাইলে ৪টা লাশ ফেলে গেছে।তার আমলে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল এলাকায় একটা অসহায় হিন্দু পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে।

সেই ওসি মোটা অংকের টাকা খেয়ে প্রভাবশালী কয়েকজনকে সেই হিন্দু বাড়ি দখলে দিয়ে গেছেন কৌশলে হিন্দু পরিবারের লোকদের কাছ থেকে জাল জালিয়াতির কাগজ সৃজন করে। এছাড়াও অসংখ্য অপকর্ম সরাইলে করে গেছেন সেই ওসি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে তদন্ত করলে আমরা সবকিছুর প্রমাণ সংগ্রহ করে দিব। আশা করি ছাত্র-জনতার পছন্দের সরকার বিষয়টির দিকে নজর দেবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এখানে উল্লেখ যে, বর্তমানে সরাইল থানায় যারা কর্মরত রয়েছেন, তারা খুবই আন্তরিক এবং জনগণের সাথে মিলেমিশে কাজ করছেন। তাই সরাইলের মানুষ এ কঠিন পরিস্থিতিতে থানাপুলিশের সাথে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর