শেরপুরে দুটি ব্রীজের একটি অচল অপরটিতে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ , ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়ার পিলার ঢেবে যাওয়া ব্রীজ।

শেরপুরের মৃগি নদীর ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি ব্রীজ বেহাল অবস্থায় পরে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। ব্রীজ দুটির একটি সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগনীমুরা গ্রামে আরেকটি শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়া গ্রামে। এতে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছে দুই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

সদরের ব্রীজটি অনেক আগেই অর্ধেক নদীতে ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরশেরপুরের যোগনীমুরা গ্রামের সাথে শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া গ্রামের। শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরের খড়িয়ার পিলার ঢেবে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে ওই এলাকার মানুষরা।

শ্রীবরদী উপজেলার কাজিরচরে মৃগী নদীর ওপর নির্মিত ব্রীজটি গত ১০ বছর আগে দুটি পিলার দেবে গেছে। এতে ব্রীজটির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। কাজিরচর, খড়িয়াপাড়া, পশ্চিম ঝিনিয়াসহ চারটি গ্রামের লোকজন উপজেলা সদর, পাশ্ববর্তী হাইস্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে এ ব্রীজটি দিয়ে। ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে অটোরিক্সা, ভ্যান, মোটর সাইকেল, সাইকেলসহ হালকা যানবাহন। ট্রাক, ট্রলিসহ পন্য পরিবহনের কোন গাড়ী এ ব্রীজের ওপর দিয়ে যেতে না পারায় এ এলাকার উৎপাদিত পন্য বিভিন্ন এলাকায় আনা-নেওয়া করতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ এলাকার জনগনকে। এতে কৃষি পণ্য উৎপাদন করেও প্রকৃত দাম পাচ্ছে না এ এলাকার কৃষকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ নানা সময় মাপযোগ নিয়ে গেলেও এ ব্রীজটি করা হচ্ছেনা।

সদর উপজেলার চরশেরপুরের ব্রীজটির অর্ধেক নদীতে ভেঙ্গে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে যোগনীমুরা গ্রামের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া গ্রামের।

রিপন মিয়া বলেন, এ ব্রীজ দিয়ে আসতে অনেক ভয় লাগে। গাড়ী চলাচল করতে সমস্যা হয়। গাড়ীর যাত্রী নামিয়ে দিয়ে তারপর গাড়ী তুলতে হয়। আসলে ব্রীজটি সাপের মত হয়ে গেছে।

কৃষক করিম মিয়া বলেন, আমরা এই নদীর পাড়ো মেলা রহমের সবজি ও ধানের আবাদ করি। কিন্তু ঠিকমত গাড়ী আসবার পাই না বলে আমাগো জিনিসের দামও পাই না। বাজারেও ঠিকমত তুলতে পারি না। আমরা সরকারের কাছে এ ব্রীজটা চাই।

জয়নাল বলেন, আমরা কত কষ্ট করে যে এ ব্রীজটা পার হই এডা শুধু আল্লাহ জানে। এডা সাইকেল চালায়াও ব্রীজ পার হওন যায় না। সাইকেল থাইক্কা নাইম্মা পার করতে হয়। মেলাদিন থাইক্কা ব্রীজটা নষ্ট। কবে যে মানুষজন নিয়া ভাইঙ্গা পরবো আল্লাহ জানে।

রহমান মিয়া বলেন, এডার তো খালি মাপ নিয়া যায়। কোন কাম হয় না। আমরা খুব আতংকে ব্রীজটি পাড় হই। সরকারের কাছে ব্রীজটি আমাদের দাবী।

এর চেয়েও খারাপ অবস্থা একই নদীর ওপর শেরপুর সদর উপজেলার যোগিনীমুরার ব্রীজটির। এ ব্রীজটি অন্তত একযুগ আগে নদীর পানির প্রবল স্রোতে পাঁচটি প্যানের মধ্যে দুটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে এ ব্রীজ আর সংস্কার বা পূন: নির্মান না করায় কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ব্রীজের বাকী তিন প্যানের বাকী অংশ। আর জনগন পোহাচ্ছে চরম দূর্ভোগ। নদীর ওপারে চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমারা খড়িয়াপাড়া গ্রামের চার শতাধিক ভোট দেন যোগিনীমুরা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। নদীতে ব্রীজ না থাকায় তাদের তিন কিলোমিটার ঘুরে এসে ভোট দিতে হয়। যে কারণে প্রতি বছরই নিরাপদে ভোট দিতে পারেনা তারা। এ এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ফসিহ্ উল্ উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে আসতে পারছেনা। শুধু তাই নয় যোগিনীমুড়া, নামাপাড়াসহ চারটি গ্রামের মানুষের নদী পাড় হয়ে কৃষি কাজ করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। তাই তাদের দাবী দ্রুত এই ব্রীজটি করে দেয়ার।

হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা এ ব্র‍িজটির জন্য অনেক কষ্টে আছি। নদীর ওপারে আমাদের ৪ শ ভোটার আছে এরা ভোটও দিতে পারে না সময়মত। অনেক কৃষি পণ্য আছে এগুলা উৎপাদন হলেও বাজারে তুলতে পারি না আমরা।

নাহিদ মিয়া বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা নদীর ওপারে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ওখানে পড়াশোনা করে। খুব কষ্ট করে নদী পাড় হয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। এ ব্র‍িজটি করার পরেই নদীতে অর্ধেক ভেঙে পরে। আমরা সরকারের কাছে এ ব্র‍িজটির সংস্কার চাই।

শেরপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাজিরচরের ব্রীজটির নির্মানের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শুকনো মওসুমে কাজ শুরু করা হবে। শেরপুর প্রকল্প নামে একটি নতুন প্রকল্পে যোগিনীমুরা ব্রীজটির নির্মানের জন্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সারাদেশে এত উন্নয়ন হলেও কেন এ ব্রীজটির নির্মান করা হচ্ছেনা এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।