প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদে ডাক্তার : বেড়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতার জ্ঞান

প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 1 year আগে

শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী খুুদে ডাক্তার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এই স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মসূচি চলবে ১৭-২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরজমিন দেখা মিললো এমন একদল ক্ষুদে ডাক্তারের। যেসব ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের বয়স ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর।

বৃহস্পতিবার (২১সেপ্টেম্বর) সকালে দেখা যায়, ভীষণ ব্যস্ত ডাক্তারদের কেউ রোগীদের নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ রোগীদের ওজন মাপছে, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছেন, শেখাচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি। কোনো শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই তা রোগীকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী তার অভিভাবকের মাধ্যমে নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নেবেন।

পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে সেবা নিতে পরামর্শ প্রদান করবেন।সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও টিম গঠন করে ক্ষুদে ডাক্তার তাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দেশব্যাপী প্রতিটি সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ক্ষুদে ডাক্তারদের এ কার্যক্রম কর্মসূচি শুরু হয়ে চলবে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আনোয়ারা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ে ১২ জন ক্ষুদে ডাক্তার তাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে এ কার্যক্রম খুবই ফলপ্রদ।

ক্ষুদে ডাক্তার,সাকের আলী সজিব, সাদিকুর রহমান সামি, রুহান সিংহ, চাঁদনী আক্তার ইসা, শুভ্র বর্না মালাকার বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারা বলেন,যখন সাদা পোশাক গায়ে দেই, তখন নিজেকে ডাক্তারের মতো মনে হয়। আমরা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সহপাঠি ও ছোটদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিই।ওজন ও উচ্চতা মাপি, দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা দেখি।সেসব আবার খাতায় লিখে হেড স্যারের কাছে জমা দিই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাহিদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১১ জন। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ক্লাস থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্ষুদে ডাক্তারের দল গঠন করা হয়েছে।অ্যাপ্রোন,ওজন মিটার, উচ্চতা মাপার স্কেল বা ফিতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট) বিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে রোগ জীবাণু সম্পর্কে ধারণা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাতে-কলমে শিক্ষা পাচ্ছে তারা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,শিশুদের স্বাস্থ্যসচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ২০১১ সালে সারা দেশে বিদ্যালয়গুলোতে চালু করা হয় খুদে ডাক্তার কার্যক্রম। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃমি নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবুল আলম ভূইয়া বলেন, ক্ষুদে ডাক্তারদের কিছু স্বাস্থ্য শিক্ষা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। এরপর তারা তাদের সহপাঠি ও ছোটদের সাথে সেসব বিষয়ে আলোচনা করে। ক্ষুদে ডাক্তাররা নিজেরা সচেতন হবে এবং অন্যদের সচেতন করবে।

মন্তব্য লিখুন