
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) বিভিন্ন ব্যাচের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলে ২০ শতাংশের অধিক শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করছে। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে ভর্তি-যুদ্ধে টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম সেমিস্টারে ফেল করে হতাশায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৪৫তম ব্যাচের প্রথম সেমিস্টারে মোট দশটি বিভাগে ৫৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করে এমন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৪ জন। ৪৭তম ব্যাচের ৫৬৫ জনের মধ্যে ২৫১ জন এবং ৪৮তম ব্যাচের ৫৬৬ জনের মধ্যে ১৫০ জন। শতকরা হিসাব বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫তম ব্যাচের প্রায় ২২ শতাংশ, ৪৭তম ব্যাচের ৪৪ শতাংশ এবং ৪৮তম ব্যাচের ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করে।
অধিক শিক্ষার্থী ফেল করছে সেসবের মধ্যে ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, গণিত বিষয়ে ফেলের হার বেশি।
ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার বিষয়ে ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২৮ জন ফেল করলেও পরবর্তী ব্যাচগুলোতে সে সংখ্যা আরও বেশি। ৪৭তম ব্যাচ থেকে ফেল করে ১০৬জন এবং ৪৮তম ব্যাচ থেকে ৭৬জন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সে ৪৫তম ব্যাচ থেকে ৪৮জন, ৪৭তম ব্যাচ থেকে ১০৭ জন এবং ৪৮তম ব্যাচ থেকে ৬২ জন। গণিত বিষয়ে ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফেল করে ৩৪ জন, ৪৭তম ব্যাচ থেকে ১১২ জন, ৪৮তম ব্যাচ থেকে ১৩ জন।
বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিংয়ের সাথে পরিচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সে ফেল করা শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, উচ্চমাধ্যমিকে প্রোগ্রামিংয়ের ওপর কেবল একটি অধ্যায় থাকে বিধায় অনেকে এটা বাদ দেয়, কেউবা মুখস্ত করে পরীক্ষায় উত্তর করে। যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কোর্স পায় তাদের কাছে সব নতুন লাগে। এতে অনেকে এটার সাথে ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। আবার পর্যাপ্ত চর্চার অভাবে এই বিষয়ে খারাপ করছে।
তাছাড়া শিক্ষকদের পাঠদানে আন্তরিকতার ঘাটতিকেও দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, কোর্সটি নতুন ও শিক্ষার্থীদের বুঝতে বেশি সময় লাগে, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকরাও পড়াচ্ছেন না। শিক্ষকের কেউকেউ শিক্ষার্থীরা কোডিংয়ের মৌলিক বিষয়াবলী জানেন ধরে নিয়ে শুরু করে। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে কষ্ট হয়।
৪৭তম ব্যাচের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাদিয়াতুল আলম জানান, করোনাকালীন সময়ে আমাদের শুরুর দিকের ক্লাসগুলো অনলাইনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার কারিকুলাম বোঝার আগেই পরীক্ষা চলে আসে। আগে বাংলায় লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সবকিছু ইংরেজিতে হওয়ায় অনেকেরই সমস্যা হয়। তাছাড়া, আমাদের যে বেসিক সি-প্রোগ্রামিং শেখানো হয়েছে তা দিয়ে পরীক্ষায় আসা কঠিন প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব হয় না।
তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অমনোযোগিতা, ক্লাসে উপস্থিত না থাকা, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছেকে ফেল করার কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকগণ।
গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. অনুপ কুমার দত্ত এবং ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ মোঃ রিয়াজুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম বারের মতো সব বিষয় ইংরেজিতে হওয়ায় লেখাপড়া করতে সমস্যা হয়। ফলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিভাগীয় প্রধান বলেন, কিছু শিক্ষার্থী অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আশানুরুপ বিভাগ না পাওয়ায় নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে ভর্তি হয়। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া না করলেও হয় এই মন মানসিকতা অনেকের মধ্যে কাজ করে, তাই তারা আশানুরুপ ফলাফল পারে না। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীদের মন মানসিকতার পরিবর্তন একটি ভালো ফলাফল এনে দিতে পারে।
ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার কোর্সে অকৃতকার্যের সংখ্যা বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বাশার উদ্দিন বলেন, এটি টেক্সটাইলের বেসিক কোর্স। এতে অনেকগুলো ফাইবার সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হয় তাত্ত্বিকভাবে, কোনো ব্যবহারিক না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝে মুখস্থ করে। কিন্তু কোর্সটিতে অনেকগুলো ফাইবার সম্পর্কে পড়াশোনা করা লাগলেও মোটামুটি সেলুলজিক ও প্রোটিন বেজড ফাইবার এবং একটির বৈশিষ্ট্যের সাথে অন্যটির অনেক মিল ও পারস্পরিক-সম্পর্ক বিবেচনা না করে শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করে। ফলে আলাদা ফাইবার ও সংখ্যায় অনেক বেশি মনে হয় বলে তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়।
তাছাড়া তিনি আরও বলেন, প্রতি কোর্সে ক্লাসে উপস্থিতির হার ৬০ ভাগের নিচে হলে শিক্ষার্থীরা এটেন্ডেন্সে ৮ এর মধ্যে শুন্য পায়। কেউ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে ক্লাসে শিক্ষকরা পড়াশোনার যে প্রক্রিয়া শেখান তা শিখতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস টেস্টগুলোতেও ভালো করতে পারে না। ক্লাসগুলো নিয়মিত না করায় ফাইনাল পরীক্ষাতেও খারাপ করে।
তিনি বিগত পাঁচ বছরের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করার পাশাপাশি ক্লাসে মনোযোগী ও ক্লাসের বাহিরে শিক্ষকের দেওয়া গুগল ক্লাসরুমে সিলেবাস, রেফারেন্স বই, ভিডিও লেকচার অনুযায়ী পড়াশোনা করার পড়ামর্শ দেন।
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
কালিয়াকৈরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
কালিয়াকৈরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের...
সংবর্ধনা পেলেন নবীনগর প্রেসক্লাবে সভাপতি মোঃ হোসেন শান্তি
সংবর্ধনা পেলেন নবীনগর প্রেসক্লাবে সভাপতি মোঃ...
আ.লীগ নিষিদ্ধে কমলগঞ্জে মধ্যরাতে জামায়াতের আনন্দ মিছিল, মিষ্টি...
আ.লীগ নিষিদ্ধে কমলগঞ্জে মধ্যরাতে জামায়াতের আনন্দ...
কমলগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে জামায়েত ইসলামীর হুইল চেয়ার বিতরণ
কমলগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে জামায়েত ইসলামীর হুইল...
কমলগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রসরকর্মীদের নিয়ে শিক্ষাশিবির
কমলগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রসরকর্মীদের নিয়ে শিক্ষাশিবির
পাওনা টাকার জন্য দিনমজুরকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
পাওনা টাকার জন্য দিনমজুরকে ছুরিকাঘাতে হত্যার...