
রাজমোহন সরকার। বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি। বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার চাইত্তাইন ইউনিয়নের বামেশ্বর গ্রামে। বর্ষা এলেই তিনি কুঁচিয়া ধরতে নেমে পড়েন। বছরের আর বাকি দিনগুলোতে তিনি কৃষি কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। পরিবারে স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়ের বিয়ে হয়েছে।
রবিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের টান মান্দাইল গ্রামে ধরখার-মোগড়া রাস্তার পাশে কেউচ্ছা (কেঁচো) দিয়ে কুঁচিয়া ধরার ফাঁদ প্রস্তুত করার সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে।
রাজমোহন এই প্রতিবেদককে বলেন, এক সপ্তাহ হয়েছে তিনি এই এলাকায় এসেছেন। পেশা কৃষি হলেও বর্ষাকাল এলেই কুঁচিয়া ধরতে তিনি বিভিন্ন এলাকায় চলে যান। দিনের বেলায় কুঁচিয়া ধরার জন্য হুকোর ভিতর আদার দিয়ে প্রস্তুত করে রাখি। আর রাতের বেলায় সেগুলো বিলের পানির নিচে রেখে দেই।
রাজমোহনের ভাষায়, ‘এর ভেতর আদার দিলে কুইচ্চা চইল্লা আসে। আর বাইর হইতে পারে না। এই হুকো দিয়া আমরা কুইচ্চা (কুঁচিয়া) ধরি। কুইচ্চার আদার অইল (হইল) কেউচ্ছা (কেঁচো)। বড়শি আর হুকো হইছে কুঁচিয়া ধরার মূল অস্ত্র। অনেকে আবার বড়শি দিয়া কুইচ্চা ধরে। আমরা ধরি হুকোয়।’
তথ্যমতে, কুঁচিয়া সর্পাকৃতি এক ধরনের মাছ। কুচিঁয়াকে (ইংরেজিতে Asian swamp eel) বলা হয় ইল। এটি একটি ইল প্রজাতির মাছ। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Monopterus cuchia। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ আইনের) রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল ২ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। অঞ্চলভেদে এরা কুঁচিয়া, কুইচ্চা, কুঁচে বা কুঁচে বাইন নামে পরিচিত। রাক্ষুসে ধরনের এই মাছ খুব শক্তিশালী। সাপের মতো দেখতে বলে আমাদের দেশের মানুষ এই মাছটি খুব একটা খায় না বললেই চলে। হিন্দু আর নৃগোষ্ঠীর অনেকের কাছে মাছটির চাহিদা ব্যপক। কুঁচিয়া খাল, বিল, হাওর, পুকুর আর কুয়ায় বাস করে। বড়শি আর হুকো হচ্ছে কুঁচিয়া ধরার মূল অস্ত্র।
আক্ষেপ করে রাজমোহন বলেন, হারাদিন (প্রতিদিন) এত্ত কষ্ট করি, দিনে পাই মাত্র দুইএক কেজি কুইচ্চা (কুঁচিয়া)। আবার কোনদিন পাইওনা (পাইনা)। এক কেজি কুইচ্চার দাম বাজারে সবোর্চ্চ দুইশত ট্যাকা। এগুলো দিয়ে কি আর সংসার চলে? হেরপড়েও (তারপর) বেকার থাকোনের (থাকার) চেয়ে একটা কাজে লাইগা থাকা ভালা।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনকার কুইচ্চা আমরা একটা ড্রামে জমাই। সপ্তাহে একদিন সব একত্রে বিক্রি করি। ঢাকার উত্তরায় এর বিরাট বাজার। সেইখানে ১১০টা কুইচ্চা কেনার ঘর আছে। উত্তরা, খালপাড় আর হাউজিংয়ে কুইচ্চার সব আড়ত। বেশিরভাগ কুইচ্চা দেশের বাইরে চইলা যায়। চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে কুইচ্চা রফতানি হয়। কুইচ্চা সেসব দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। আর দেশের মুইধ্যে সব বালা হুটেলে এগুলা বিক্রি হয়। অনেকে কুইচ্চারে বাইন কইয়া চালায়। রান্ধন ভালা হুইলে যে আর বুঝন যায় না স্যার কোনটা কুইচ্চা আর কোনটা বাইন। তবে যাই কই না ক্যান কুইচ্চা খুব টেস্টি খাবার!’
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ভাঙন আতঙ্কে, রামপাশায় বাঁধ নির্মানের...
কমলগঞ্জে ধলাই নদীর ভাঙন আতঙ্কে, রামপাশায়...
কালিয়াকৈরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি
কালিয়াকৈরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের...
সংবর্ধনা পেলেন নবীনগর প্রেসক্লাবে সভাপতি মোঃ হোসেন শান্তি
সংবর্ধনা পেলেন নবীনগর প্রেসক্লাবে সভাপতি মোঃ...
আ.লীগ নিষিদ্ধে কমলগঞ্জে মধ্যরাতে জামায়াতের আনন্দ মিছিল, মিষ্টি...
আ.লীগ নিষিদ্ধে কমলগঞ্জে মধ্যরাতে জামায়াতের আনন্দ...
কমলগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে জামায়েত ইসলামীর হুইল চেয়ার বিতরণ
কমলগঞ্জে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে জামায়েত ইসলামীর হুইল...
কমলগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রসরকর্মীদের নিয়ে শিক্ষাশিবির
কমলগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর অগ্রসরকর্মীদের নিয়ে শিক্ষাশিবির