ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওএমএস তালিকা কেলেংকারী ডিলারের ব্যাখ্যা তলব

প্রকাশিত: ৩:৩২ অপরাহ্ণ , ১২ মে ২০২০, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওএমএস তালিকায় জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং ওএমএস ডিলার আলহাজ্ব মোঃ শাহআলমের স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ স্বজনের অস্তিত্ব পেয়েছে প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান সোমবার ডিলার মোঃ শাহআলমের কাছে তার ডিলারশীপ কেন বাতিল করা হবেনা মর্মে ব্যাখ্যা তলব করেন। এতে বলা হয় কোভিড-১৯ সংক্রমনের উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কাউতলীর শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওএমএস ডিলার হিসেবে আপনি (শাহআলম) ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন।

১০নং ওয়ার্ডের ওএমএসের ভোক্তা তালিকায় আপনার স্ত্রী, মেয়ে, ভাইবোনসহ নিকট আত্বীয়স্বজনের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন। যা ন্যায় সঙ্গত নয়। এই কর্মকান্ডের কারনে ওএমএস নীতিমালা, ২০১৫ মোতাবেক তার ডিলারশীপ কেন বাতিল হবেনা আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে এর সন্তোষজনক জবাব চাওয়া হয়। ওদিকে বিশেষ ওএমএস তালিকা থেকে সামর্থ্যবান ব্যাক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেয়া এবং তালিকা প্রনয়নে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্যে পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ওই চিঠিতে বলা হয় সামর্থ্যবানদের নাম তালিকায় অর্ন্তভূক্তির বিষয়ে গনমাধ্যমে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে দৈবচয়নভিত্তিতে ভোক্তা তালিকা যাচাই করেছে প্রশাসন। এতে প্রথম দফায় অর্ন্তভূক্ত ৬ হাজার জন ভোক্তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৯১জন সামর্থ্যবান ব্যাক্তি বা পরিবারের নাম পাওয়া গেছে। তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া ছাড়াও বিদ্যমান তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করে সামর্থ্যবান ভোক্তাদের চিহ্নিত করতে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রনীতব্য ৩হাজার ৬’শ জন ভোক্তার তালিকা প্রনয়নে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করার জন্যে মেয়রকে অনুরোধ করা হয়।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা মো: শাহআলমের বিরুদ্ধে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারন শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসা চালক, ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নাম বিশেষ ওএমএস তালিকায় স্থান পায়। এরপরই তদন্তে নেমে প্রশাসন তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় তালিকায়। তারা হচ্ছে শাহআলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মোঃ সেলিম, আরেক ভাই মোঃ আলমগীর, শ্যালক মোঃ তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া। ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী একজন, শিক্ষক প্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, ইমাম, পুরোহিত ও গনমাধ্যম প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এই তালিকা প্রনয়ন করবে বলে নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতা শাহআলম নিজের কর্তৃত্বে তার পরিবারের লোকজনের নাম স্থান পায়। এছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতা শাহআলম তার বাড়ির আশপাশের ধনার্ঢ্য ব্যাক্তিদের নামও ওএমএস তালিকায় উঠান।

একাধিক ৫তলা বাড়ি রয়েছে এমন পরিবারের সদস্যরে নামও রয়েছে তালিকায়। প্রাথমিকভাবে তার গ্রাম কাউতলীতে এমন ২২জনের নাম খুজে পায় প্রশাসন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: মাকবুল হোসেনের ৩ ভাই মোঃ আরিফ, মোঃ হানিফ ও মোঃ গোলাম রাব্বীর নামও রয়েছে তালিকায়। আলহাজ্ব মোঃ শাহআলম শাহআলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সাধারন সম্পাদক এবং শিল্প ও বনিক সমিতির সহ-সভাপতি।

মন্তব্য লিখুন