যাকাত অর্থ, যাকাতের নিয়ম, যাকাত আদায়ের শর্তসমূহ ও যাকাত বিষয়ক মাসআয়েল

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ , ২২ মে ২০২০, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

?যাকাতঃ

যাকাত (আরবি: زكاة‎‎ zakāt, “যা পরিশুদ্ধ করে”, আরও আরবি: زكاة ألمال‎‎, “সম্পদের যাকাত”[১]) হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।[২][৩] সাধারণত নির্ধারিত সীমার অধিক সম্পত্তি হিজরি ১ বছর ধরে থাকলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) বা ১/৪০ অংশ[৪][৫]বিতরণ করতে হয়। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ্ব এবং যাকাত শুধুমাত্র শর্তসাপেক্ষ যে, তা সম্পদশালীদের জন্য ফরয বা আবশ্যিক হয়। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে “যাকাত” শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার। নামাজের পরে সবচেয়ে বেশি বার এটি উল্লেখ করা হয়েছে।[৬]

?#যাকাতের_বিষয়_ভিত্তিক_আয়াতঃ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থাৎ- নামাজ কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রাসুলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।
(সূরা নূর, আয়াত-৫৬)

وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ
অর্থাৎ- পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা যাকাত দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করবে।
(সূরা রুম, আয়াত-৩৯)

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থাৎ- যাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক্ব এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(সূরা তাওবাহ, আয়াত-৬০)

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
অর্থাৎ- আর যারা স্বর্ণ ও রুপা জমা রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
(সূরা তাওবাহ, আয়াত-৩৪)

وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ (6) الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
অর্থাৎ- আর মুশরিকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। যারা যাকাত দেয়না এবং পরকালকে অস্বীকার করে।
(সূরা হামীম সাজদাহ, আয়াত-৭)

?#যাকাতের_শর্তসমূহঃ

স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণসম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তার উপর যাকাত ফরয হয়ে থাকে। যেমন:

১. #সম্পদের_উপর_পূর্ণ_মালিকানাঃ
সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ, মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর অন্যের অধিকার বা মালিকানা না থাকা এবং নিজের ইচ্ছামতো সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার পূর্ণ অধিকার থাকা। যেসকল সম্পদের মালিকানা সুসস্পষ্ট নয়, সেসকল সম্পদের কোনো যাকাত নেই, যেমন: সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ। অনুরূপভাবে জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য ওয়ক্‌ফকৃত সম্পদের উপরেও যাকাত ধার্য হবে না। তবে ওয়াক্‌ফ যদি কোনো ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয়, তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।

২.#সম্পদ_উৎপাদনক্ষম_হওয়াঃ
যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে, অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন: গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রীত যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মালামাল বর্ধনশীল।[৭] অর্থাৎ যেসকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয়, সেসবের উপর যাকাত ধার্য হবে না, যেমন: ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল, চলাচলের বাহন ইত্যাদি।

৩. #নিসাব_পরিমাণ_সম্পদঃ
যাকাত ফরয হওয়ার তৃতীয় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা। সাধারণ ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়টি মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যের সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হয়। পশুর ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বিভিন্ন (বিস্তারিত: ‘যাকাত প্রদানের নিয়ম’ দ্রষ্টব্য)।

৪. #মৌলিক_প্রয়োজনাতিরিক্ত_সম্পদ_থাকাঃ
সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধুমাত্র তার উপরই যাকাত ফরয হবে। এপ্রসঙ্গে আল-কুরআনে উল্লেখ রয়েছে:
লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদের [স.] নিকট) জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কী ব্যয় করবে? বলুন, যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বলে দেন।[৮]
মুহাম্মদের [স.] সহচর ইবনে আব্বাস [রা.] বলেছেন,
“ অতিরিক্ত বলতে পরিবারের ব্যয় বহনের পর যা অতিরিক্ত বা অবশিষ্ট থাকে তাকে বুঝায়।[৯] ”
জনাব ইউসুফ আল কারযাভী’র মতে স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, ও পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের ভরণ-পোষণও মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।[১০]

৫. #ঋণমুক্ততাঃ
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋণমুক্ততা, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণ ঋণগ্রস্থ হন যা, নিসাব পরিমাণ সম্পদও মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার চেয়ে কম হয়, তার উপর যাকাত ফরয হবে না। ঋণ পরিশোধের পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই কেবল যাকাত ওয়াজিব হয়। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি হলো: যে ঋণ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয় সে ঋণের ক্ষেত্রে যেবছর যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেবছর সে পরিমাণ ঋণ বাদ দিয়ে বাকিটুকুর উপর যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ বাবদ যাকাত অব্যাহতি নেয়ার পর অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে।

৬.#সম্পদ_এক_বছর_আয়ত্তাধীন_থাকাঃ
নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ ১ বছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত।[১১] তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বর্তপত্রে (Balance Sheet) বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

?#বিশেষ_ক্ষেত্রে_যাকাতঃ

≪≫#অপ্রাপ্তবয়স্ক_ও_পাগলের_যাকাতঃ
সম্পদের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিংবা পাগল হলে, তার যাকাত তার আইনানুগ অভিভাবককে আদায় করতে হবে।

≪≫#যৌথ_মালিকানাধীন_সম্পত্তির_যাকাতঃ
কোনো সম্পদে যৌথ মালিকানা থাকলে সম্পদের প্রত্যেক অংশীদার তাঁর স্ব স্ব অংশের উপরে যাকাত দিবেন, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার অতিরিক্ত হয়। অর্থাৎ সম্পদের স্বীয় অংশের মূল্য অন্যান্য সম্পদের সাথে যোগ করে হিসাব করে যদি দেখা যায় তা নিসাব পরিমাণ হয়েছে বা অতিক্রম করেছে, তবে যাকাত দিতে হবে।

≪≫#নির্ধারিত_যাকাতঃ
যাকাত নির্ধারিত হওয়াসত্ত্বেয় পরিশোধের আগেই সম্পদের মালিকের মৃত্যু হলে তার উত্তরাধিকারগণ অথবা তার তত্ত্বাবধায়ক তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে যাকাত বাবদ পাওনা ও কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করবেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পত্তি, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টিত হবে।
তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে ন্যস্ত সম্পদের যাকাত:মালিকের পক্ষ থেকে নিয়োগকৃত আইনানুগ তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্পত্তি ন্যস্ত থাকলে মালিকের পক্ষে উক্ত তত্ত্বাবধায়ক সে যাকাত পরিশোধ করবেন।

≪≫#বিদেশস্থ_সম্পদের_যাকাতঃ
যাকাত ওয়াজিব হবার জন্য সম্পত্তি নিজ দেশে থাকা শর্ত নয়। বরং সম্পত্তি অন্য দেশে থাকলেও তার উপর যাকাত দিতে হবে। তবে উক্ত দেশ ইসলামী রাষ্ট্র হলে এবং দেশের সরকার যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত দিলে তা আর আলাদা করে দিতে হবে না।

? #যাকাত_বণ্টনের_খাতসমূহঃ

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবা যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন।[১২] । এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দ্দিষ্ট, এবং যেহেতু তা আল্লাহ’র নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে যাকাত, ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।[১৩][ক]
ফকির (যার কিছুই নেই)[১৪]
মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই) [১৪]
যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই) [১৪]
(অমুসলিমদের) মন জয় করার জন্য[১৫]
ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশী
(স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি
মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত)
হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত, এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরো প্রশস্ত।[১৬] উল্লেখিত খাতসমূহে যাকাত বণ্টন করতে সঠিক পন্থায়। অনেকে যাকাতের অর্থে শাড়ি ক্রয় করে তা বন্টন করে থাকেন। এভাবেও যাকাত আদায় হয়ে গেলেও এভাবে আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকাত গ্রহণকারীর তেমন উপকার হয় না। তাই যাকাত বন্টনের উত্তম পন্থা হলো: যাকাত যাদেরকে প্রদান করা যায়, তাদের একজনকেই বা একটি পরিবারকেই যাকাতের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়া

?#যাকাতমুক্ত_সম্পদঃ

যাকাতমুক্ত সম্পদ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মের বাণীবাহক মুহাম্মদ [স.] বলেছেন, বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, আরোহণের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কাজে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাচা তরিতরকারিসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে নষ্ট হয়ে যায়, এমন ফসলে যাকাত নেই।[১৮] যদিও হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি, যথা বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরিতরকারি ও ফলসমূহের যাকাত দিতে হয়। হাদিসের আলোকে যেসকল সম্পদসমূহকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো: জমি ও বাড়িঘর; মিল, ফ্যাক্টরি, ওয়্যারহাউজ বা গুদাম ইত্যাদি; দোকান; এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু; ব্যবহার্য যাবতীয় পোশাক; বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী; গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প; অফিসের যাবতীয় আসবাব, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও নথি; গৃহপালিত সকলপ্রকার মুরগী ও পাখি; কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধনসামগ্রী; চলাচলের যন্তু ও গাড়ি; যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম; ক্ষণস্থায়ী বা পঁচনশীল যাবতীয় কৃষিপণ্য; বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ; যাকাতবর্ষের মধ্যে পেয়ে সেবছরই ব্যয়িত সম্পদ; দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনস্বার্থে নিয়োজিত; সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ।[৯]যে ঋণ, ফেরত পাবার আশা নেই (স্থায়ী কুঋণ), তার উপর যাকাত ধার্য হবে না।

? #যাকাত_প্রদানের_নিয়মঃ
যাকাতের ‘নিসাব পরিমাণ’ বিভিন্ন দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। নিচে এসংক্রান্ত বিস্তারিত দেয়া হলোঃ[১৫][১৭]

(১) বিষয়ঃ
নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা এবং ব্যবসায়িক পণ্য।
★পরিমাণঃ
৫২.৫ তোলারূপার মূল্যমান।
যাকাতের_হারঃ
সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%।

(২) বিষয়ঃ
স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা সোনা-রূপার অলংকার।
★পরিমাণঃ
সোনা ৭.৫ তোলা এবং রূপা ৫২.৫ তোলা।
যাকাতের_হারঃ
সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%।

(৩)বিষয়ঃ
কৃষিজাত দ্রব্য।
★পরিমাণঃ
আবু হানিফারমতে, যেকোনো পরিমাণ;
অন্যান্যদের মতে, ৫ ওয়াসাক বা ২৬ মণ ১০ সের;
ইসলামিক ইকোলজিক্যাল রিসার্চ ব্যুরো’র মতে, ১৫৬৮ কেজি।
যাকাতের_হারঃ
বৃষ্টিতে উৎপাদিত দ্রব্যের ১০%

(৪)বিষয়ঃ
খনিজ দ্রব্য।
★পরিমাণঃ
যেকোনো পরিমাণ।
যাকাতের_হারঃ
দ্রব্যের ২০%।

(৫)বিষয়ঃ
ভেড়া-ছাগল।
★পরিমাণঃ
৪০-১২০টি
১২১-২০০টি
২০১-৪০০টি
৪০০-৪৯৯টি
৫০০ বা ততোধিক।
যাকাতের_হারঃ
১টি ভেড়া বা ছাগল
২টি ভেড়া বা ছাগল
৩টি ভেড়া বা ছাগল
৪টি ভেড়া বা ছাগল
৫টি ভেড়া বা প্রতি শ’তে ১টি।

(৬)বিষয়ঃ
গরু-মহিষ।
★পরিমাণঃ
৩০-৩৯টি
৪০-৪৯টি
৫০-৫৯টি
৬০-৬৯টি
৭০-৭৯টি
৮০-৮৯টি
৯০-৯৯টি
১০০-১১৯টি।
যাকাতের হারঃ
১টি এক বছরের বাছুর
১টি দুই বছরের বাছুর
২টি দুই বছরের বাছুর
১টি তিন বছরের এবং ১টি দুই বছরের বাছুর
২টি তিন বছরের বাছুর
৩টি দুই বছরের বাছুর
১টি তিন বছরের এবং ২টি দুই বছরের বাছুর
দুই বছরের বাছুর -এভাবে ঊর্ধ্বে হিসাব হবে।

(৭)বিষয়ঃ
উট
★পরিমাণঃ
৫-৯টি
১০-১৪টি
১৫-১৯টি
২০-২৪টি
২৫-৩৫টি
৩৬-৪৫টি
৪৬-৬০টি
৬১-৭৫টি
৭৯-৯০টি
৯১-১২০টি
১২১-১২৯টি
১৩০-১৩৪টি
১৩৫-১৩৯টি
১৪০-১৪৪টি
১৪৫-১৪৯টি
১৫০ এবং তদুর্ধ্ব।
যাকাতের হারঃ
১টি তিন বছরের খাশি অথবা ১টি এক বছরের বকরি
২টি এক বছরের বকরি
৩টি এক বছরের বকরি
৪টি এক বছরের বকরি
৪টি এক বছরের মাদী উট
২টি তিন বছরের মাদী উট
২টি চার বছরের মাদী উট
১টি পাঁচ বছরের মাদী উট
২টি তিন বছরের মাদী উট
২টি চার বছরের মাদী উট
২টি চার বছরের মাদী উট এবং ১টি ছাগল
২টি চার বছরের মাদী উট এবং ২টি ছাগল
২টি চার বছরের মাদী উট এবং ৩টি ছাগল
২টি চার বছরের মাদী উট এবং ৪টি ছাগল
২টি চার বছরের মাদী উট এবং ১টি দুই বছরের উট
৩টি ৪ বছরের মাদী উট এবং প্রতি ৫টিতে ১টি ছাগল।

(৮)বিষয়ঃ
ঘোড়া
★পরিমাণঃ
(এক্ষেত্রে তিনটি মত পাওয়া যায়)
যাকাতের হারঃ
যাকাত নেই
কিংবা সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%
কিংবা প্রতিটি ঘোড়ার জন্য ১ দিনার পরিমাণ অর্থ।

(৯)বিষয়ঃ
শেয়ার, ব্যাংক নোট, স্টক
★পরিমাণ
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান
যাকাতের হারঃ
সম্পূর্ণ মূল্যের ২.৫%।।তবে কোম্পানী যাকাত দিলে ব্যক্তিগতভাবে যাকাত দিতে হবে না।

(১০)বিষয়ঃ
অংশীদারী কারবার ও মুদারাবা
★পরিমাণঃ
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্যমান।
যাকাতের হারঃ
প্রথমে সম্পত্তির যাকাত দিতে হবে, মূলধনের নয়; এরপর লাভ বন্টিত হবে। যাকাত ব্যক্তিগতভাবে লাভের উপর হবে, একভাগ (২.৫%) দিবে মূলধন সরবরাহকারী এবং একভাগ (২.৫%) দিবে শ্রমদানকারী।