ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরে তীব্র যানজট, আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ নেই

প্রকাশিত: ৯:১১ পূর্বাহ্ণ , ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
ছবি- কালের বিবর্তন

রাস্তায় ট্রাফিক আছে, ট্রাফিক আইনও আছে, নেই শুধু আইনের প্রয়োগ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরে তীব্র যানজটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাসিন্দারা। অটোরিকশা ও ইজিবাইকগুলো বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল করায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে শহরে দিন দিন যানবাহন বাড়লেও নেই ট্রাফিক ব্যবস্থা। প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি বৈধ অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিকশা ও সিএনজির দাপটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এমন সব সমস্যা নিত্যদিনের হলেও প্রশাসন যেন নির্বিকার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এখনই যদি লাগাম টেনে না ধরেন এবং আইনের প্রয়োগ না করেন তবে শহরবাসীর জন্য এটা বড়ই দুঃসংবাদ। তবে প্রশাসন বলেছে মামলার ডিভাইস পুড়ে যাওয়ার কারণে তারা আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দিতে না পারায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না।

কয়েকজন রিকশারোহী জানান, সকাল নয়টার পর থেকেই যানজটের তীব্রতা বেড়ে যায়। চলে রাত নয়টা পর্যন্ত। কালিবাড়ি মোড় থেকে কুমারশীল মোড় পর্যন্ত ৫০০ গজ রাস্তা পার হতে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লেগে যায়।

জানা যায়, পৌর শহরের আয়তন ১৭ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভায় ১২টি ওয়ার্ড ও ৩৪টি মহল্লা রয়েছে। এটি ‘ক’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুসারে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৪১ জনের বসবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায়।

পৌরশহরের কাউতলি মোড়, রেলগেট, কালীবাড়ি মোড়, টিএ রোড, কুমারশীল মোড়, পাইকপাড়া মোড় হয়ে মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে শহরের মূল অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে বড় বড় বিপণিবিতান, ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি/বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক হাসপাতাল।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ছোট্ট এই শহরে পৌরসভার লাইসেন্সধারী রিকশা রয়েছে প্রায় তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ইজিবাইক। এর বাইরে লাইসেন্সবিহীন রিকশা আছে আরও প্রায় দশ হাজার এবং ইজিবাইকের সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর এর সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে থ্রি হুইলার সিএনজি। এছাড়া বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত যানবাহন রয়েছে আরও প্রায় পাঁচ হাজার। তারা রাস্তায় যত্রতত্র মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করছে। ফলে যানজট আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অন্যদিকে শহরের ফুটপাতসহ রাস্তা দখল করে হকারেরা ব্যবসা পরিচালনা করায় পথচারীরা ফুটপাত না পেয়ে রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

এসব বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ঘাটুরা ও রামরাইল দুটি পয়েন্টে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দভরা। এজন্য মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যান কমবেশি শহরের ভিতরের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করছে ফলে শহরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে সাধারণ মানুষজনও আইন মানতে একপ্রকার নারাজ। এছাড়াও মামলার ডিভাইস পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে কোন মামলা দেওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠন তরী বাংলাদেশ এর আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, পৌরসভা যখন অটোরিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স প্রদান করে তখনও আমরা নিষেধ করেছি। পরবর্তীতে যখন আবার লাইসেন্সের নবায়ন করবে শুনেছি তখনও আমার বাঁধা প্রদান করেছি। তখন আমরা কোন লিখিত আবেদন করিনি। তবে এভাবে চলতে থাকলে আমরা লিখিত আবেদন করবো এমনকি শহরের যানজট নিরসনে ও ভারসাম্য রক্ষায় আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবো এবং প্রয়োজনে আন্দোলনও করবো।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক (উপসচিব) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, অনিবন্ধিত যেসব অটোরিকশা ও ইজিবাইক রয়েছে শহর ছাড়ার জন্য তাদেরকে আলটিমেটাম দিয়ে আগামীকাল সোমবার থেকে টানা তিন দিন শহরে মাইকিং করা হবে। পরের সপ্তাহ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো যাতে এ শহরে অনিবন্ধিত যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়াও জেলার প্রতিটি পৌরসভা থেকে কি পরিমাণ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেই তালিকা চেয়ে পৌরসভার প্রশাসকগণকে আমরা চিঠি দিব। তালিকা পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর