ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হতদরিদ্রদের উপহারে তালিকায় চেয়ারম্যান পরিবার!

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ , ১ জুন ২০২০, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

মজিবুর রহমান খান: করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আড়াই হাজার টাকার তালিকা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তালিকায় তার ছেলে, আপন দুই ভাই ও বোনসহ পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত এবং হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে ঈদ উপহার হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা করে দিচ্ছেন। এজন্য জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক এবং সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়টি উপজেলার ৭৫ হাজার পরিবারকে দেয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই ঈদ উপহার। কিন্তু কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়ার বিরুদ্ধে তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের করা ৫৮৮ জনের তালিকায় ক্ষমতার অপব্যাহার করে চেয়ারম্যান আলম মিয়া নিজের ছেলে, আপন দুইভাই ও বোনসহ পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তালিকার ৬০ নম্বর ক্রমিকে চেয়ারম্যানপুত্র মো. আরাফাত আলম, ১৩৩ নম্বরে চেয়ারম্যানের আপন বড় ভাই ইউনুছ মিয়া, ৩২২ নম্বরে আপন ছোট ভাই ছোটন মিয়া, ২১২ নম্বরে আপন বোন জরিনা বেগম, ১২১ নম্বরে আপন চাচী জোহরা বেগম, ১১৭ নম্বরে চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী মমতাজ বেগম, ৪৯ ও ৩৯১ নম্বরে আপন মামাতো ভাইয়ের দুই ছেলে কাজল মিয়া ও সেন্টু মিয়া, ৪৭৭ নম্বরে আপন চাচাতো ভাই সৌদি আরব প্রবাসী মাসুদ রানার স্ত্রী নয়ন মনি, ১৭৯ নম্বরে আরেক চাচাতো ভাই রুস্তম মিয়া, ৩২৮ নম্বরে ভাতিজার স্ত্রী নিলোফা বেগম, ৩৪৪ নম্বরে মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী আলেয়া বেগম, ৫১২ নম্বরে মামাতো ভাই ছাত্তার মিয়া, ৫৪৪ নম্বরে চাচাতো ভাই সুমন মিয়া, ০২ নম্বরে ভাতিজা মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী রফিয়া আক্তার, ৬৩ নম্বরে চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে লাইলী আক্তার, ১০১ নম্বরে মামাতো বোন সেলিনা বেগম, ১১১ নম্বরে ফুফাতো ভাই গোলাম মোস্তফা এবং ৫৩৫ নম্বরে ফুফাতো ভাই গোলাম মোস্তফার ছেলে আল আমিনের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, নিজ পরিবার ও আত্মীয় স্বজন ছাড়াও চেয়ারম্যান আলম তার পছন্দ অনুযায়ী নাম অন্তর্ভূক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের তালিকায়। পুরো ইউনিয়নের জন্য করা ৫৮৮ জনের তালিকায় নিজ এলাকা ৪নং ওয়ার্ড শিমরাইল সাতপাড়া গ্রাম থেকেই দিয়েছেন ১২০ জনের নাম। মেহারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি অনন্ত সুজন বলেন, তালিকা নিয়ে লোকজন অভিযোগ করার পর আমি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি তার কার্যালয়ে আমার সঙ্গে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেছেন। মেহারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়া বলেন, তালিকায় বোনের নাম নেই, দুই ভাইয়ের নাম আছে। আমার চাচাতো ভাই একটা গরীব আছে। এজন্য তার নাম দিয়েছি। তবে তালিকায় নিজের ছেলের নাম নেই বলে দাবি করেন তিনি। কসবা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, তালিকায় কোনো ধরনের ভুল-ভ্রান্তি থাকলে আমরা সেগুলো মন্ত্রণালয়ে লিখে পাঠাচ্ছি। চেয়ারম্যান যদি ক্ষমতার অপব্যাবহার করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর