ইজারা ছাড়াই চলছিল যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নাধীন সাতমাইল পশুর হাট। এই হাটে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সামান্য কিছু টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করতো এখানকার স্থানীয় একটি গোষ্ঠী।
হাট সূত্রে জানা যায়,পশুর হাটের ইজারা শেষ হয় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ ইজারাবিহীনভাবে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাটটি চালাতেন বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- ইলিয়াস কবির বকুল ও পার্শ্ববর্তী কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি- হাসান ফিরোজ আহম্মেদ টিংকু।
তাদের কাছ থেকে ব্যাপারীরা ৩,০০০ টাকা দিয়ে কার্ড নিলেও গরুপ্রতি অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে আদায় করতেন। সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে গরুপ্রতি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা আদায় করা হতো। গরুর হাট ইজারা না হওয়ায় সরকারি পাস মূল্য ছিল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
গেল ৫ আগস্ট/২০২৪ ইং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঐসব নেতাকর্মী গা ঢাকা দেয়। এরপর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে পশু হাটটি দুইদিন পরিচালনা করে শার্শা উপজেলা প্রশাসন।
সরকার পতনের পর বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি- বকুল ও কায়বা ইউনিয়ন সভাপতি- টিংকুর কাছ থেকে করা "ব্যাপারী কার্ড"র কোনো সুবিধা পায়নি কার্ডধারীরা। হাটে কার্ডধারী ব্যাপারী ও সাধারণ ক্রেতাদের একই মূল্যে প্রতিটি গরুর পাস শুরু হলে ক্ষুব্ধ হয় কার্ডধারী ব্যাপারীরা।
তারা আন্দোলন শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় গত ২০ আগস্ট/২০২৪ হাটটি বন্ধ করে দেয় শার্শা উপজেলা প্রশাসন। মাসখানেক পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর/২০২৪ ফের চালু হয় হাটটি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাটের অলিখিত দায়িত্ব পান বাগআঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপি'র যুগ্ম আহ্বায়ক- জাহাঙ্গীর হোসেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে মঙ্গল ও শনিবার সপ্তাহে দুইদিন হাট চালু থাকে।
স্থানীয় সুত্র থেকে জানা যায়, বাংলা ১৪২৮ সালে সাত মাইল পশুর হাটের ইজারা ডাক ছিল সাড়ে ৮ কোটি টাকা, ১৪২৯ সালে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ও ১৪৩০ সালে এ হাটের ডাক ছিল সাড়ে ১০ কোটি টাকা। নতুন বছর ১৪৩১ সালে এ হাটের কোনো ডাক বা ইজারা হয়নি।
আগের ইজারাদাররা সরকারি আইন অমান্য করে হাটের খাজনা আদায় করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছে।
সূত্র মতে, প্রতি হাটে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু সরকারিখাতে জমা হয় ৯০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
সাতমাইলের হাট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ এনে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানান বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক।
আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন-৯ এপ্রিল/২০২৪ শার্শা উপজেলা অফিসার এই হাটের খাস আদায়ে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন। বাগআঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে কমিটির সভাপতি করা হলেও ইলিয়াস কবির বকুল ও হাসান ফিরোজ টিংকু ঐ কমিটির কোনো সদস্যকে হাটে প্রবেশ করতে দেননি।
তারা ইচ্ছেমতো সরকার নির্ধারিত গরু প্রতি ১৫০ টাকা ফি'র জায়গায় ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন। ফলে, গত ১৬ এপ্রিল সেখান থেকে আয় হয় ১২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি কোষাগারে জমা করা হয় মাত্র ২ লাখ টাকা। তেমনই ২০ এপ্রিল আয় হয় ৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং সরকারি কোষাগারে জমা হয় ২ লাখ টাকা।
এখানে হাট আদায়ের ৫% ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৫% পশু হাট উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। তিনি আরও দাবি করেন, কতিপয় সন্ত্রাসী অবৈধভাবে হাট থেকে টাকা উত্তোলন করে ভোগদখল করছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে।
অবশেষে ঝুলে থাকা সাতমাইল পশু হাটের দরপত্র আহবানের ঘোষণা দিল শার্শা প্রশাসন। ২২/১০/২০২৪ ইং তারিখ নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাজী নাজিব হাসান স্বাক্ষরিত ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- বাংলা ১৪৩১ সনে বাগআঁচড়া সাতমাইল পশু হাটের পুনরায় ইজারা বিজ্ঞপ্তি-২০২৪/০২।
সরকারি হাট-বাজারসমূহের ব্যবস্হাপনা নীতিমালা-২০১১ এর ৪.৭ নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক শার্শা উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাগআঁচড়া সাতমাইল পশু হাটে বাংলা ১৪৩১ সনের ইজারা গ্রহণের সময় হতে ৩০ চৈত্র ১৪৩১ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ইজারা প্রদানের নিমিত্তে আগ্রহী দরদাতার নিকট হতে নিম্নোক্ত সময়সূচী ও শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে সীলমোহরকৃত বন্ধ খামে দরপত্র আহবান করা যাচ্ছে।
সিডিউল দরপত্র দাখিলের পূর্বদিন পর্যন্ত অফিস চলাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, যশোর, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, শার্শা, যশোর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শার্শা, যশোর এর কার্যালয় হতে নির্ধারিত মূল্যে (অফেরতযোগ্য) সিডিউল ক্রয় করা যাবে। (১৪৩১ সনের সারা বছরের জন্য৬% বৃদ্ধিসহ সরকারি মূল্য ছিল-৭,৭০,৬২,৩৫৩/- টাকা)।
দরদাতাকে নিম্নে উল্লিখিত উদ্ধৃত মূল্যের ৩০% অর্থ ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার এর মাধ্যমে দরপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। যে কোন তফশীলী ব্যাংক হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শার্শা, যশোর এর অনুকূলে ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার জমা প্রদান করতে হবে। উক্ত টাকা হতে ২৫% অর্থ ইজারা মূল্যের সাথে সমন্বয় করা হবে এবং ০৫% অর্থ জামানত হিসাবে সংরক্ষিত থাকবে।
সরকারি বিধি মোতাবেক অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট, ১০% আয়কর প্রদান করতে হবে। (দাখিলকৃত দরের সাথে ১০০ একশত ভাগ ইজারা মূল্য, ভ্যাট ১৫% ও আয়কর ১০%, জামানত-০৫% সর্বমোট-১৩০ (একশত ত্রিশ ভাগ) অর্থ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শার্শা, যশোর বরাবর ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডার সংযুক্তকারী দরদাতাকে সবোর্চ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে)। সম্পূর্ণ ইজারার অর্থ জমাদানের পরে ইজারাদারের সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হবে।
দরপত্র দাখিলের ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে সমুদয় অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় দরপত্র বাতিল করে পরবর্তী তারিখে দরপত্র জমা নেয়া হবে। সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা প্রদান করা হবে। দরপত্র ফরমে দরের ঘরে কোন ঘষামাজা বা কাটাকাটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
দরপত্র দাখিলের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বেলা ১০.০০ টা হতে দুপুর ১.০০ টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক, যশোর, সহকারী কমিশনার (ভূমি), শার্শা, অফিসার ইন-চার্জ, শার্শা থানা, যশোর ও নিম্নস্বাক্ষরকরীর কার্যালয়ে রক্ষিত দরপত্র বাক্সে দরপত্র দাখিল করা যাবে এবং ঐদিনই বিকাল ৩.০০ টায় উপস্থিত দরদাতাদের সম্মুখে (কেউ যদি উপস্থিত থাকে) নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে দরপত্র কমিটির সম্মুখে রক্ষিত দরপত্র বাক্স খোলা হবে। কর্তৃপক্ষ কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে যে কোন দরপত্র গ্রহণ বাতিলের ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জহির রায়হান
প্রধান কার্যালয়ঃ ১০৭ মতিঝিল বা/এ, ৯ম তলা, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
মোবাইলঃ 01713-733969, 01924-665561, ইমেইলঃ news@kalerbiborton.com
© কালের বিবর্তন ২০১৯ - ২০২৪ সর্বসত্ব সংরক্ষিত