ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পারিশ্রমিক চাইতে গিয়ে চিকিৎসকের দ্বারা নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী

প্রকাশিত: ৯:১৪ অপরাহ্ণ , ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 weeks আগে
আহত গৃহকর্মী মালতি সেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মারধরসহ নির্যাতনের অভিযোগ এনে ফারহানা ফারিয়া নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলা করেছেন এক গৃহকর্মী। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গৃহপরিচারিকার নাম মালতি সেন। তিনি সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের নাটাই গ্রামের মৃত মনি সেনের স্ত্রী। বর্তমানে একমাত্র ছেলে মাধব সেনকে নিয়ে জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। গত দেড় বছর চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার শহরের মুন্সেফপাড়ার বাসায় কাজ গৃহকর্মীর কাজ করেছেন মালতি। চিকিৎসক ফারজাহান ফারিয়ার দেড় বছরের সন্তানকে দেখাশোনাও করতেন মালতি সেন। ফারহানা জেলা শহরের গ্লোবাল অর্থোপেডিক্স জেনারেল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং নাজ মেডিকেল সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

গৃহকর্মীর পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের শেষের দিক থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়ার মুন্সেফপাড়ার বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন মালতি। সেসময় চিকিৎসক ফারহানার দুই মাস বয়সী একটি মেয়ে শিশু ছিল। মূলত শিশুকে দেখাশোনা করা এবং রান্না বান্নার জন্য মালতিকে নিয়োগ দেন ফারহানা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে খাওয়া-দাওয়াসহ প্রতি মাসে আট হাজার টাকা করে বেতনের চুক্তিতে কাজ করা শুরু করেন মালতি। কয়েক মাস যাওয়ার পর গৃহকর্মী মালতির সঙ্গে প্রায় খারাপ আচরণ শুরু করেন চিকিৎসক ফারহানা। প্রায় মালতিকে প্রায় গালিগালাজসহ মারধর করতেন চিকিৎসক ফারহানা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে কাজ শুরুর ছয় মাস পর কাজ ছেড়ে চলে যান মালতি। পরে চিকিৎসকের অনুরোধে পুনরায় কাজে যোগ দেন মালতি। কয়েক মাস ভালো থাকার পর আবার পূর্বের মতো খারাপ আচরণ, গালিগালাজ ও মারধর শুরু করেন চিকিৎসক ফারহানা। চিকিৎসক ফারহানার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে গত ১৫ ফেব্রæয়ারি কাজ ছেড়ে দেন মালতি। যখন কাজ ছেড়ে দেন তখন মালতি দেড় মাসের বেতন পাওনা ছিলেন। দেড় মাসের বেতন আনতে গত ২০ এপ্রিল রাত আটটার দিকে সঙ্গে পরিচিত মুন্নি আক্তার নামে একজনকে নিয়ে চিকিৎসক ফারহানার মুন্সেফপাড়ার বাসায় যান। সেসময় চিকিৎসক ফারহানা কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার জেরে গৃহকর্মী মালতিকে কিল, ঘুষি, চরথাপ্পরসহ মারধর করেন। এক পর্যায়ে মালতির শাড়ি দিয়ে মালতিকে গলায় প্যাচিয়ে ধরেন। সেসময় সঙ্গে থাকা মুন্নি এগিয়ে গিয়ে মালতিকে রক্ষা করে। এঘটনায় গত ২২ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলা করেন মালতি। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার মামলাটি তদন্তের নির্দেশের কাগজপত্র হাতে পান সিআইডি।

মালতি সেন বলেন, আমার গলায় ও বাম হাতে এখানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। মেডাম আমাকে শুধু শুধু গালিগালাজসহ মারধর করতেন। প্রায় চর-থাপ্পর দিতেন। ওনার শিশুটার প্রতি মায়া জন্ম হওয়ায় কাজ করছিলাম। কিন্তু ওনার নির্যাতন দিনদিন বাড়ছিল। তাই অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়। দেড় মাসের বেতন ১২ হাজার টাকা আনতে গেলে তিনি আমাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে গলায় শাড়ি দিয়ে প্যাচিয়ে ধরে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেন। আমার ছেলে শহরের নাজ মেডিকেল সেন্টারে এক্সরে বিভাগে কাজ করেন। মামলা করায় এখন তিনি আমার ছেলেকে কাজ থেকে বের করে দিতে চাইছেন। তিনি বলেন, আমি দেড় মাসের বেতন চাই এবং আমাকে নির্যাতনের বিচার চাই। গরীব হলেও আমি তো মানুষ।

মালতির আইনজীবী নাসির মিয়া বলেন, মানব পাচার আইন-২০১২ এর ৯ ধারায় জবরধস্তিভাবে কাজে বাধ্য করাসহ নির্যাতনের ধারায় ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ মামলা করেছেন মালতি। তার গলায় ক্ষতের চিহ্ন এখানো স্পষ্ট। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথার বলতে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ কেটে চিকিৎসক ফারহানা ফারিয়া। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিআইডির পরিদর্শক মোবারক হোসেন সরকার বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকিলে মামলাটির তদন্তের নির্দেশের কপি হাতে পেয়েছি। মামলা বাদীকে শনিবার কার্যলয়ে আসতে বলেছি। ঘটনা তদন্তে সত্যতা যা পাওয়া যাবে প্রতিবেদনে তাই উল্লেখ করা হবে। ওই নারী ন্যায় বিচার পাবেন।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর