বিজয়নগর

গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে ভাইয়ের হত্যা মামলা

প্রকাশিত: ৭:৩১ অপরাহ্ণ , ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
নিহত নাছিমা আক্তার।

বিজয়নগরে নাছিমা আক্তার নামের গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর হত্যা মামলা হয়েছে স্বামীর বিরুদ্ধে। গত সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাই সেলিম মিয়া।

মামলায় নাছিমাকে যৌতুকের দাবীতে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ করা হয় স্বামী জুয়েল রানা (২৪) বিরুদ্ধে।

মামলাটি আমালে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক।

বাদী পক্ষের আইনজীবি মেঃ তারেকুল ইসলাম মৃধা নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জুয়েল রানা আদমপুর (গিলামুড়া) গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। মামলায় নিহতের শ্বশুড় রাজা মিয়া (৫৫), শ্বাশুরি ফুল তারা বেগম (৫৭), ও ননদ আকলিমা (২৬) কে আসামী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, গত ১৫ জুলাই বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আদমপুর (গিলামুড়া) গ্রামের রাজা মিয়ার ছেলে জুয়েল রানার সাথে বিয়ে হয় পাহাড়পুর ইউনিয়নের গোয়ালনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালিবের কন্যা নাছিমা আক্তারের সাথে। বিয়ের পর থেকে প্রতিনিয়ত নাছিমাকে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক এনে দেওয়া দাবী করে স্বামী ও তার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন। তবে আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় টাকা নাছিমা তার পরিবারকে টাকার কথা জানায় না। এতে স্বামী-শ্বাশুড়ি ও তার ননদের দ্বারা প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছিলো নাছিমা। এক পর্যায়ে নির্যাতনের বিষয়টি নাছিমা তার ভাই সেলিম সহ অন্যান্য স্বজনদের জানায়। পরে নাছিমার ভাই সেলিমসহ পরিবারে অন্যান্য লোকজন বোনের শ^শুড় বাড়িতে গিয়ে সমঝোতা করে আসে। তার কিছুদিন নাছিমার স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ভালো ব্যাবহার করলেও গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে সেই যৌতুকে দাবী নিয়ে শারিরীক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে নাছিমার স্বামী গলা চেপে শ্বাসরুদ্ধ করে নাছিমাকে হত্যা করে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে সকলে মিলে নাছিমার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয়।

নাছিমার ভাই ও মামলার বাদী সেলিম মিয়া বলেন, বিয়ের প্রথম দিকে নাছিমার স্বামী বা তার শ^শুড় বাড়ির লোকজন কোনো যৌতুকের দাবী করে নি। কিছু যেতে না যেতেই তারা নাছিমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। সেটি না দেওয়ায় তারা সকলে মিলে আমার বোনকে শারীরিক নির্যাতন করত। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমঝোতা হওয়ার পরও সেদিন তারা আমার বোনকে শারিরীক নির্যাতন করে তারপর গলাচেপে মেরে ফেলে এবং গলায় ওড়না পেচিয়ে পাখায় ঝুলিয়ে রাখে। সকালে খবর দেয় নাছিমা আত্মহত্যা করেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নাছিমার লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফনের পর বিজয়নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে সেটি গ্রহণ না করে আদালতে যাওয়া পরামর্শ দেয়। পরে গত মঙ্গলবার আমার বোন নাছিমার স্বামীসহ তার পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করি।

ওসি বলেন, গত ১ তারিখ সকালে খবর আসে এক গৃহবধূর লাশ ঝুলে আছে। সাথে সাথে পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল করানো হয়। সেই সুরতহালে পুলিশ শারিরীক নির্যাতনের কোনো চিহ্ন পায় নি। পরে লাশ ময়নাতদেন্তর জন্য পাঠানো হয় এবং একটি অপমৃত্যুর মামলা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নাছিমার পরিবারের লোকজন হত্যা মামলা দায়ের করতে এলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলি। পরে তারা আদালতে দারস্থ হওয়া কথা জানায়।

তিনি আরো বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আদালতের যদি মামলা করে থাকে সেক্ষেত্রে আদালত যে নির্দেশনা দিবে পুলিশ সে মোতাবেক কাজ করবে।

উলেখ্য, গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে বিজয়নগর উপজেলা পাহাড়পুর ইউনিয়নের গিলামুড়া গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে নাছিমা বেগম নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মন্তব্য লিখুন

আরও খবর