মোঃ তাসলিম উদ্দিন সরাইল প্রতিনিধিঃ ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁ ইউনিয়নে এবার নগদ অর্থ উপহারের তালিকা নিয়েও নয় ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তার এই অর্থ পাওয়ার তালিকায় স্বচ্ছল ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উপজেলার ৮নং নোয়াগাঁও ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তার তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকার সরকারি সাহায্য বঞ্চিত মানুষ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে।
সরেজমিনে জানাযায়,
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী প্রভাব খাটিয়ে গরীব মানুষের তালিকায় তার ২৫ চাচাতো ভাই ও ২২ ভাতিজা-ভাগিনাসহ অর্ধশতাধিক নিকট আত্মীয়ের নাম দিয়ে প্রত্যেককেই ২৫০০ টাকা করে উত্তোলনের ব্যবস্থা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়া তার দেওয়া তালিকায় প্রবাসী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, স্বচ্ছল ও সম্পদশালীদের নাম নিয়ে এলাকাতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এই ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া তালিকায় তার স্বজনদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারে স্বামী, স্ত্রী, পুত্র ও পুত্র বধূর নামও রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন ইতোমধ্যে ২৫০০ টাকা করে পেয়ে উত্তোলন করেছে এবং চেয়ারম্যানের বেশিরভাগ স্বজন প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তার পেতে দু’তিন দিন আগে মোবাইল নাম্বার জটিলতার বিষয়টি সেরে দিয়েছে। এখন তারা ঈদুল আজহা’র আগে টাকা পাওয়া অপেক্ষায় আছে। এ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে গত ১৬ জুলাই সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন হতদরিদ্র নারী-পুরুষসহ এলাকাবাসী।এলাকাবাসী ও অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর নগদ প্রণোদনার আড়াই হাজার টাকার সুবিধাভোগীর তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই, ভাতিজা, ভাগিনাসহ অর্ধশতাধিক নিকটাত্মীয়। তারা কেউ পাকা বাড়িওয়ালা, ১০-১৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক, প্রবাসী ও স্বচ্ছল ব্যবসায়ীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যানের আত্মীয়তার সুবাদে একঘরে স্বামী ও স্ত্রী পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের নামও রয়েছে তালিকায়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার অর্থ সহায়তার আওতায় ৮ নং নোয়াগাঁও ইউনিয়নে ১১০০ জন সুবিধাভোগীর নাম চূড়ান্ত করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এ তালিকায় ৯টি ওয়ার্ডে সমহারে বণ্টন না করে চেয়ারম্যান অর্ধশতাধিক নিকট আত্মীয়সহ নিজ ওয়ার্ডেই আঁখিতারা গ্রামে বরাদ্দ দিয়েছেন ২৬০ জনের। আবার উপকারভোগীর নাম ঠিকানা থাকলেও মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে অন্য ব্যক্তির। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তার পেতে স্বচ্ছল, সম্পদশালী ও কর্মজীবি নারী-পুরুষদের তালিকায় নরসিন্দুর, ভাসমান, নির্মাণ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, কুলি, মজুর ও শ্রমিক দেখানো হয়েছে। এছাড়া তালিকায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি একাধিক সুবিধাভোগী ব্যক্তির নামও রয়েছে।
আঁখিতারা গ্রামের (৪নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান,আমার ওয়ার্ডে ২৬০ জনের নাম ২৫০০ টাকা প্রণোদনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ জনের নাম আমি দিয়েছি এবং ২২০ জনের নাম চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী দিয়েছেন। তিনি তার বংশের নিকটাত্মীয়ের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। স্বজনপ্রীতি করে এক পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দু’জনের নামই দিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে চেয়ারম্যানের বাড়ি, তাই এখানে সবকিছু চেয়ারম্যান একাই করেন। এ তালিকায় চেয়ারম্যানের এসব স্বজনপ্রীতির দায় ওয়ার্ড মেম্বার হিসেবে মোশাররফ হোসেন নিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য ও নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা পায়েল হোসেন মৃধা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে গরীব অসহায় দুস্থ মানুষদের জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনার নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্দেশ্যকে পুঁজি করে ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী আগামী নির্বাচনে ভোটের কর্মী বাড়ানোর লক্ষ্যে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের সেই ২৫০০টাকা করে পাইয়ে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সুযোগে তার বংশের ভাই ও ভাতিজা ৪৭ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন সেই ২৫০০টাকার তালিকায়। ফলে নোয়াগাঁও আঁখিতারার বহু প্রকৃত দুস্থ এ প্রণোদনা তালিকার বাইরে রয়ে গেছে শুধু চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীর স্বজনপ্রীতির কারণে। এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় আঁখিতারা বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নোয়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমার বাড়ি ৪নং ওয়ার্ডে সেকারণে এখানে সরকারি নানা বরাদ্দ কিছু বেশিই দিতে হয়। কারণ এই ওয়ার্ডের দুস্থ মানুষেরা আমাকেই কাছে পায় এবং বিরক্ত করে। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, আমার গোষ্ঠি-বংশে প্রায় সাড়ে চারশো ভোটার। তাদের মধ্যে অনেকেই গরীব। আমি নিয়ম মেনেই আমার গোষ্ঠীর গরীব ৩০-৩৫জনকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন ২৫০০টাকা করে পেয়েছে। বাকিদের মোবাইল নাম্বার সংশোধন করে দেয়া হয়েছে, অচিরেই তারা টাকা পেয়ে যাবে।
এখানকার একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও বিভিন্ন ভাতাভোগীদের নাম প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ উপহার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরী বলেন, একই ঘরে দুইজন এই টাকা পাবার বিধান নেই। কিন্তু এখানে যাদের দেয়া হয়েছে, তারা প্রকৃতপক্ষেই অভাবী মানুষ। আর সরকারি ভাতাভোগী দু’একজন লোক এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না। তবে তারাও গরীব অসহায় মানুষ।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা বলেন, নোয়াগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান কাজল চৌধুরীর বিরুদ্ধে এলাকার কিছু দুস্থ মানুষের দায়ের করা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য এই প্রণোদনার তালিকায় কোনো প্রকার হেরফের মেনে নেয়া হবে না।
সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুর সাংবাদিকদের জানান,বিষয়ট
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
আগস্টে ৩৮৮ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৯ নিহত ৬১৪ আহত...
আগস্টে ৩৮৮ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৫৯ নিহত...
নিখোঁজের ১৪ দিন পরও সন্ধান মিলেনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুফতি...
নিখোঁজের ১৪ দিন পরও সন্ধান মিলেনি...
ন্যায্য ভাড়ায় হয়রানী ও দুর্ঘটনামুক্ত যাতায়াতের অধিকার নিশ্চিত...
ন্যায্য ভাড়ায় হয়রানী ও দুর্ঘটনামুক্ত যাতায়াতের...
শ্রেষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় মেয়র আনিছকে ত্রিশাল অনলাইন...
শ্রেষ্ঠ মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় মেয়র আনিছকে...
নিজের সব সম্পত্তি বিক্রি করে শিক্ষার আলো ছড়ানো...
নিজের সব সম্পত্তি বিক্রি করে শিক্ষার...
গাইবান্ধায় আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক...
গাইবান্ধায় আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার...